1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চিৎকার করে বলতে চাই- আমি মানি না

প্রভাষ আমিন
৪ আগস্ট ২০২৩

মানুষের মৌলিক চাহিদা বলা হয় অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানকে৷ এরপর আসে শিক্ষা ও চিকিৎসার কথা৷কিন্তু আমার মনে হয় মানুষের মৌলিকতম চাহিদা বা অধিকার হলো বলতে পারা৷

https://p.dw.com/p/4UlRv
১৯৫২ সালে বাংলাদেশ তার রাষ্ট্রভাষার দাবি আদায় করেছিল রক্ত দিয়ে
১৯৫২ সালে বাংলাদেশ তার রাষ্ট্রভাষার দাবি আদায় করেছিল রক্ত দিয়েছবি: mahmud zaman Ovi/bdnews24.com

পছন্দ-অপছন্দ, ভালো-মন্দ, চাওয়া-পাওয়া জোর গলায়, চিৎকার করে বলতে পারাই হলো মানুষের সবচেয়ে বড় চাওয়া৷ আপনি উন্নয়নে ভাসিয়ে দেন, অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা দেন, ঘর বানিয়ে দেন, শিক্ষা দেন, চিকিৎসা দেন; লাভ নেই৷ সাঁতার না জানা শহুরে ভদ্রলোকের মত আপনার জীবনের ১৬ আনাই মিছে৷ অন্য দেশের মানুষের কথা জানি না, এ অঞ্চলের মানুষের কাছে প্রতিবাদ করতে পারাটাই সব৷ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিত্তিটাই প্রতিবাদের ওপর দাড়িয়ে৷ ১৯৪৭ সালে এ অঞ্চলের মানুষ আন্দোলন করেই পাকিস্তান আদায় করেছিল৷ কিন্তু মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় রাষ্ট্রভাষার দাবি আদায় করেছিল রক্ত দিয়ে৷ তারপরের ইতিহাস বিপ্লব আর বিদ্রোহের৷ মহাপরাক্রমশালী সামরিক শাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে বারবার মাঠে নেমেছে ছাত্র-শ্রমিক-জনতা৷ ৬২এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯এর গণঅভ্যুত্থানের পথ ধরেই এসেছে ৭০এর নির্বাচন৷ সেই নির্বাচনকেই বাংলার মানুষ বেছে নেয় প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে৷ আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও ক্ষমতা পায়নি৷সেই ধারাবাহিকতায় আসে একাত্তর৷ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে আসে স্বাধীনতা৷

স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনের দায়িত্ব নেন বঙ্গবন্ধু৷ তখন অবশ্য শক্তিশালী বিরোধী দল ছিল না৷ তারপরও দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে কাজ করতে হচ্ছিল তাকে৷ স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে শক্তিশালী ও কার্যকর বিরোধী দল না থাকলেও বছরখানেকের মধ্যে ছাত্রলীগের বিভক্তির মধ্য দিয়ে গঠিত হয় দেশের প্রথম কার্যকর বিরোধী দল জাসদের৷ বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে গঠিত জাসদ অবশ্য রাজনৈতিক বিরোধিতা আর হঠকারিতাকে গুলিয়ে ফেলে৷ থানা লুট, পাটের গুদামে আগুন, ঈদের জামাতে গুলি করে এমপি খুন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাওয়ের মত হঠকারী কর্মসূচি দিয়ে তারা দেশে অরাজকতা আর বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরি করতে পারলেও নিজেরা রাজনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারেনি৷ ভারতীয় হাইকমিশনারকে অপহরণআর ৭ নভেম্বর বিপ্লবের নামে সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে নিজেরাই রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে৷

জাসদের সৃষ্ট ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে ক্ষমতার কেন্দ্রে আসেন জিয়াউর রহমান৷ ৮১ সালের ৩০ মে নিহত হওয়ার আগে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানকে অবশ্য রাজপথে তেমন প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হয়নি৷ তবে বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে অসংখ্য ক্যু হয়েছে৷ জিয়ার রহমান নিষ্ঠুরভাবে দমন করেছেন সেসব অভ্যুত্থান চেষ্টা৷

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরের বছর ক্ষমতায় আসেন আরেক সামরেক শাসক এইচ এম এরশাদ৷ তার নয়বছরের ক্ষমতার পুরোটা জুড়েই রাজপথ ছিল উত্তাল৷ এরশাদের বিরুদ্ধে প্রথম বড় প্রতিরোধটা আসে ছাত্রদের কাছ থেকে৷ মজিদ খানের শিক্ষানীতির প্রতিবাদে ৮৩এর মধ্য ফেব্রুয়ারিতে প্রবল ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠে৷ তবে এরশাদ নিষ্ঠুর কায়দায় সে আন্দোলন দমন করেন৷ তবে জয়নাল, কাঞ্চন, দীপালি সাহা জীবন দিয়ে প্রতিবাদের যে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে গেছেন, তা পুরোপুরি নেভেনি কখনোও৷ ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার এরশাদের পতনেই থামে সে আন্দোলনের ধারাবাহিকতা৷ তবে এরশাদের বিরুদ্ধে নয় বছরের আন্দোলনের নানা পর্যায় ছিল৷ মধ্য ফেব্রুয়ারির ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভের আগেই ৮৩র জানুয়ারিতে গঠিত হয় ১৫ দল৷ আর ৮৩এর নভেম্বরে ঘেরাও কর্মসূচিতে সচিবালয়ের দেয়াল ভাঙলে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে৷ ৮৪ সালে ফুলবাড়িয়ায় মিছিলে পুলিশ ট্রাক উঠিয়ে দিলে সেলিম-দেলোয়ার শহীদ হন৷ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গ স্পর্শ করে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর পুলিশের গুলিতে যুবলীগ নেতা নুর হোসেন শহীদ হলে৷ বুকে ‘স্বৈরাচার নীপাত যাক', পিঠে ‘গনতন্ত্র মুক্তি পাক' স্লোগান লিখে জীবন্ত পোস্টার মাঠে নামা নুর হোসেনের আত্মত্যাগ রাজনৈতিক আন্দোলনে নতুন মাত্রা যুক্ত করে৷ তবে এরশাদ পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হয় ১৯৯০ সালে ১০ অক্টোবর ছাত্রদল নেতা জেহাদের শহীদ হওয়ার মধ্য দিয়ে৷ এরই ধারাবাহিকতায় ২৭ নভেম্বর ডাক্তার শামসুল আলম মিলন আততায়ীর গুলিতে শহীদ হলে গোটা দেশ অচল হয়ে যায়৷ ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগে বাধ্য হন এরশাদ৷

প্রভাষ আমিন, সাংবাদিক ও লেখক
প্রভাষ আমিন, সাংবাদিক ও লেখকছবি: DW/S. Hossain

স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রাজনৈতিক নেতৃত্বের পাশাপাশি ছাত্র-শিক্ষক-শ্রমিক-সংস্কৃতি কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ স্বতস্ফুর্তভাবে অংশ নেয়৷ সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পুলিশের গুলি, আততায়ীর গুলি, মিছিলে গাড়ি উঠিয়ে দেয়াসহ নানা চেষ্টা করেও এরশাদ শেষ রক্ষা করতে পারেননি৷ প্রথমে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৫ দল ও বিএনপির নেতৃত্বে ৭ দলের যুগপৎ আন্দোলন হয়৷ যদিও পরে ১৫ দল ভেঙে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ৮ দল ও বামপন্থীদের ৫ দল যুগপৎ আন্দোলনে সামিল থাকে৷ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে যারা মাঠে ছিলেন, তারা ভেবেছিলেন এরশাদের পতনেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে৷ গণতন্ত্র এলেই বদলে যাবে সবকিছু৷ দেশ চলবে তিন জোটের রূপরেখার আলোকে৷ কিন্তু কেউ কথা রাখেনি৷ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা আওয়ামী লীগ আর বিএনপি অবস্থান নেয় দুই মেরুতে৷ তিন জোটের রূপরেখা মিলিয়ে যায় হাওয়ায়৷ ১৯৯৪ সালে মাগুরার একটি উপনির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের প্রতিবাদে রাজপথে আন্দোলন শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলো৷ তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানায়৷ টানা হরতাল-অবরোধে অচল হয়ে যায় দেশ৷ কিন্তু প্রবল আন্দোলনের মুখেও বিএনপি সরকার ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি একতরফা নির্বাচন করে৷ সে নির্বাচনের পর আন্দোলন আরো তীব্র হয়৷ ‘জনতার মঞ্চ'এর ব্যানারে আন্দোলনের এক পর্যায়ে সচিবালয় থেকে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা ও বিভিন্ন পেশাজীবীরা রাস্তায় নেমে এলে সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাশ করেই সে সংসদ ভেঙে দেয়া হয়৷

একই বছরের জুনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী  লীগ ক্ষমতায় আসার কিছুদিন পরই বিএনপি আন্দোলনে নামে৷ জাতীয় পার্টি, জামায়াত ও ইসলামী ঐক্যজোটকে সাথে নিয়ে চারদলীয় জোট নিয়ে আন্দোলন শুরু করে বিএনপি৷ তবে আন্দোলনে নয়, স্বাভাবিক নিয়মে যথাসময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামায়াত জোট৷ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ক্ষমতাসীনদের পরাজয় ঘটবে, এমনটাই যখন অবধারিত, তখন বিএনপি সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারকেই নিজেদের পছন্দে সাজানোর পরিকল্পনা নেয়৷ বিচারকদের অবসরের বয়স বাড়িয়ে বিএনপি নিজেদের পছন্দের বিচারপতি কে এম হাসানকে প্রধান উপদেষ্টা বানাতে চাইলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে৷

আবারও রাজপথে নামে আওয়ামী লীগ৷ টানা হরতাল-অবরোধে অচল হয়ে যায় দেশ৷ নিয়ম ভেঙে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ নিজেই প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিলে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়৷ এক পর্যায়ে ২০০৬ সালের ১১ জানুয়ারি ক্ষমতা নেয় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার৷ তিন মাসের বদলে দুই বছর ক্ষমতায় থাকে তারা৷ ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিশাল জয় পায় আওয়ামী লীগ৷ কিন্তু যে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এনেছিল, তারাই হাইকোর্টের রায়ের আলোকে অসাংবিধানিক বিবেচনায় এই ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়৷ আর যারা একসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণার ঘোর বিরোধী ছিল সেই বিএনপি এই ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলনে নামে৷ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি এবং নির্বাচন ঠেকাতে ২০ দলীয় জোটের ব্যানারে সহিংস আন্দোলনে নামে৷ এর আগের বছর মানে ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে জামায়াত দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনের নামে নাশকতা চালায়৷ আর পরের বছর ২০১৫ সালে নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে বিএনপি আন্দোলনে নামে৷

২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ তিনবছরই বাংলাদেশের রাজপথ ছিল উত্তাল৷ আন্দোলনের নামে বহুমাত্রিক সহিংস ঘটনা ঘটেছে৷ পেট্রল দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারা হয়েছে৷ স্থবির হয়েছে জনজীবন৷ তবে সরকার কঠোর হাতে দমন করলে রণে ভঙ্গ দেয় বিরোধী পক্ষ৷ ২০১৮ সালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলেও তাদের ভরাডুবি ঘটে৷

২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনের পর ২০১৮ সালের নির্বাচনের মান নিয়েও দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রশ্ন সৃষ্টি হয়৷ ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিএনপি আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ফিরে আসে৷ আর গত ১২ জুলাই নয়াপল্টনে এক সমাবেশ আরো কঠোর অবস্থানে গিয়ে সরকার পতনের এক দফা শুরু করেছে বিএনপি৷ একই সঙ্গে কয়েকটি ছোট দল ও জোটও যুগপত আন্দোলনে শামিল হয়েছে৷

রাজনৈতিক আন্দোলনের বাইরেও বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন হয়েছে৷ কখনো বিদ্যুৎ, কখনো গ্যাস, কখনো সারের দাবিতে আন্দোলন হয়েছে৷ ১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন সারা দেশে অভূতপূর্ব এক উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিল৷ ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে শাহবাগে সৃষ্ট গণজাগরণের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছিল দেশে-বিদেশে৷ ২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনও সাফল্য পেয়েছিল৷ এছাড়া ধর্ষণের প্রতিবাদে বা নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নৈতিক সমর্থন পেয়েছিল সব বিবেকবান মানুষের৷

সব রাজনৈতিক বা সামাজিক আন্দোলন হয়তো সবসময় সফল হয় না৷ কিন্তু ন্যায্য দাবির পক্ষে যে কোনো আন্দোলন জনমানসে দারুণ প্রভাব ফেলে৷ জাহানারা ইমাম দেখে যেতে না পারলেও এই বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে৷ তাছাড়া সমাজে বা রাষ্ট্রে কোনো অন্যায় বা বৈষম্য হলে তার বিরুরেদ্ধ অবস্থান নেয়া সব বিবেকবান মানুষের নৈতিক দায়িত্ব৷ তবে বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে এমনভাবে বিভক্ত দলীয় যে, আনুগত্যে অন্ধরা ন্যায্যতাটা ভুলে যায়৷ আবার অনেক রাজনৈতিক আন্দোলন তাৎক্ষণিক বিচারে সাফল্য না পেলেও জনমনে সাফল্যের ধারণা তৈরি হয়৷ নির্বাচনের আগে আন্দোলনে জিততে চায় রাজনৈতিক শক্তিগুলো৷

আন্দোলন, সংগ্রাম, বিপ্লব, বিক্ষোভ মানুষের সহজাত মৌলিক অধিকার৷ বাংলাদেশের সংবিধানও সে অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়েছে৷ সংবিধানের তৃতীয় ভাগে মৌলিক অধিকার অংশের ৩৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে৷‘ সংবিধানে জনশৃঙ্খলা, জনস্বাস্থ্য, শান্তিপূর্ণ ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হওয়ার অধিকার থাকলেও বাস্তবে আমরা সংবিধানকে থোড়াই কেয়ার করি৷ বাংলাদেশে আন্দোলন মানেই ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, পুড়িয়ে মানুষ মারা, জনজীবন বিপর্যস্ত করা, জনগণকে জিম্মি করা৷ যে যত বেশি মানুষকে জিম্মি করতে পারবে, যত বেশি মানুষ মারা যাবে; সে আন্দোলন যেন তত সফল৷ আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থে আন্দোলন করে; জনগণের কথা, দেশের কথা, অর্থনীতির কথা তারা সামান্যই ভাবে৷ সরকারও সংবিধান স্বীকৃত অধিকার নিষ্ঠুর কায়দায় দমন করে৷ হামলা, মামলা, গ্রেপ্তারে আন্দোলন দমন করতে চায়৷

পরিবহন বন্ধ রেখে, পথে পথে তল্লাশি করে, ভয় দেখিয়ে বিরোধী সমাবেশে লোক সমাগম ঠেকাতে চায়৷ সবাই ভুলে যায় ভয় দেখিয়ে জয় করা যায় না৷ নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা বড়দের শিখিয়েছে, দাবি যৌক্তিক হলে সহিংসতা ছাড়াও জনগরণর সমর্থন পাওয়া যায়, আদায় করা যায়৷ বঙ্গবন্ধু তার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণেও ন্যায্য কথা একজন বললেও তা মেনে নেয়ার কথা বলেছিলেন৷

সংবিধান যেমন অধিকার দিয়েছে, সব মানুষের তার অধিকারের কথা জোর গলায় বলার স্বাথধীনতা থাকা উচিত৷ এমনকি আমার মতের সাথে না মিললেও তার আন্দোলন করার বা বলার অধিকার যেন সমুন্নত থাকে৷ কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাথে ব্যক্তিগতগতভাবে আমার ভিন্নমত ছিল৷ কোটায় বৈষম্যের কথা বলা হলেও আমি বিশ্বাস করি কোটা ব্যবস্থা করাই হয়েছিল বৈষম্য দূর করতে৷ কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের আন্দোলন করার অধিকারের প্রতি আমার পুর্ণ শ্রদ্ধা ছিল৷আন্দোলনকারীদের ওপর সরকারের নিপীড়নের প্রতিবাদ করেছি আমি৷ আমি চাই, সবাই জোর গলায় তার অধিকারের কথা বলুক৷ চিৎকার করে বলতে পারুক- আমি মানি  না৷