1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আরএএফ: জার্মানিতে সন্ত্রাসবাদের অমীমাংসিত এক অধ্যায়

১১ মার্চ ২০২৪

রেড আর্মি ফ্যাকশন বা আরএএফ৷ ১৯৬০ ও ৭০ এর দশকে জার্মানিকে নাড়িয়ে দিয়েছিল বামপন্থি এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি৷ বিলুপ্তির আড়াই যুগ পেরুলেও এখনও তাদের নিয়ে কুল কিনারা করতে পারেনি জার্মানির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷

https://p.dw.com/p/4dOjY
আরএএফ এর মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসীদের ছবি ও নামসহ একটি পোস্টারের নমুনা
আরএএফ-এর মোস্ট ওয়ান্ডেড সন্ত্রাসীদের ধরিয়ে দিতে পশ্চিম জার্মানিজুড়ে তাদের ছবি প্রচার করে কর্তৃপক্ষ ছবি: Polizei/dpa/picture-alliance

জার্মানিতে আজও রেড আর্মি ফ্যাকশন (আরএএফ) নিয়ে কথা বলা তুমুল বিতর্কের এক বিষয়৷ ফেডারেল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজা ফেব্রুয়ারির শেষে বলেছেন আরএএফএর অপরাধ ‘‘আজও ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানিতে বামপন্থি চরমপন্থা এবং বামপন্থি সন্ত্রাসবাদের বিপদের অনন্য  উদাহরণ৷’’

সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি নিজেদের বিলুপ্ত ঘোষণার পর ২৫ বছরের বেশি অতিক্রান্ত হয়েছে৷ তারপরও আরএএফ এর সদস্যদের নিয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর অজানা রয়ে গেছে৷ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষে আরএএফ এর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সবশেষ জড়িতদের খোঁজে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশ৷

আরএএফ এর গোড়াপত্তন হয় ১৯৭৭ সালের দিকে৷ যদিও তার আগেই ফ্রাঙ্কফুর্টে বামপন্থি গেরিলাদের তৎপরতা শুরু হয়৷ বিভিন্ন জায়গায় ডিপার্টমেন্ট স্টোরে তারা অগ্নিসংযোগ ঘটায়৷ এইসব ঘটনায় জড়িত হিসেবে আন্দ্রেয়াস বাডাকে অভিযুক্ত করা হয়৷ ১৯৭০ সালে তিনি জেল পালিয়ে আরএএফ-এর জন্ম দেন৷ তিনি ছাড়াও শুরুর দিকে দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মধ্যে ছিলেন উলরিকে মাইনহফ এবং গুডরুন এনসলিন৷ সবচেয়ে উল্লেযোগ্য দুই নেতার নামে তখন দলটি পরিচিত ছিল ‘বাডা-মাইনহফ গ্রুপ' নামে৷

কুখ্যাত ব্যক্তিরা

১৯৯০ এর দশক পর্যন্ত দলটি জার্মানিতে অসংখ্য হামলা চালায় তারা, যেসব ঘটনায় পঁয়ত্রিশ জন নিহত হয়েছেন৷ তাদের মধ্যে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও ছিলেন৷

১৯৭৭ সালে তাদের হাতে নিহত হয়েছেন দেশের চিফ প্রসেকিউটর সি সিগফ্রিড বুবাক, ড্রেসডনার ব্যাংকের প্রধান ইয়্যরগেন পন্টো৷ দ্বিতীয় প্রজন্মের আরএএফ সদস্যদের হাতে অপহৃত হন পশ্চিম জার্মানির জাতীয় কর্মী সংস্থার প্রধান হান্স মার্টিন শ্লেয়ার এবং নাৎসি জার্মানির প্রধান আধাসামরিক সংস্থা এসএস-এর একজন সাবেক কর্মকর্তা৷ আরএএফ এর বন্দি নেতাদের মুক্ত করা ছিল তাদের লক্ষ্য৷ কিন্তু এ চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর আরএএফ-এর তিন নেতা আন্দ্রেয়াস বাডা, গুডরুন এনসলিন এবং ইয়ান-কার্ল রাসপে জেলখানায় আত্মহত্যা করেন৷ অন্যদিকে অপহরণের ৪৪ দিনের মাথায় হান্স মার্টিন শ্লেয়ারকে হত্যা করা হয়৷

এর বাইরেও তাদের হাতে নিহত হয়েছেন কোম্পানির গাড়ি চালক, দেহরক্ষী, সাধারণ পুলিশ কর্মকর্তারা৷ পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে ১৯৭৭ সালের হেমন্তে জার্মানিতে অচলাবস্থা নেমে এসেছিল৷ মহাসড়কগুলোতে নিয়মিত যানবাহনে তল্লাশি এবং বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ দেয়া হয়েছিল৷ গোটা দেশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল৷

১৯৯০ এর দশক পর্যন্ত দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্মের আরএএফ সদস্যরা তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখে৷ জার্মানিতে মার্কিন ঘাঁটিগুলোকে তারা একের পর এক লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে৷ ১৯৯৮ সালের বসন্তে দলটি দীর্ঘ একটি চিঠি প্রকাশ করে নিজেদের বিলুপ্ত ঘোষণা করে৷

যেসব প্রশ্নের উত্তর নেই

তবে অপরাধীদের খোঁজে অনুসন্ধান অব্যাহত রাখে কর্তৃপক্ষ৷ কিন্তু ১৯৭০ থেকে ৯৮ সাল পর্যন্ত সংঘটিত বেশিরভাগ অপরাধের এখনও কোনো সুরাহা করতে পারেনি তারা৷ যেসব আরএএফ সদস্যরা গ্রেপ্তার হয়েছেন বা যাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে সংগঠনটির সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়ে কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি৷ আর তাই আরএএফ আর তার রক্তপাতের বিচারকাজের অধ্যায়ের এখনও ইতি ঘটেনি৷

যেসব প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি তার মধ্যে অন্যতম হলো ১৯৬০ ও ৭০-এর দশকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা বিভাগের কী ভূমিকা ছিল৷ হামবুর্গের রাজনীতি বিশেষজ্ঞ ভলফগাং ক্রাউশার মনে করেন গোয়েন্দা বাহিনীর এজেন্ট পিটার উরবাখ এক্ষেত্রে মূল চরিত্রের ভূমিকায় ছিলেন৷ ২০১৮ সালে ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘অমীমাংসিত হলেও উরবাখ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন, যা প্রতিবাদের ছোট কিন্তু কঠিন একটি নিউক্লিয়াসকে একটি জঙ্গি দল এবং নেটওয়ার্কে রূপ দিয়েছিল, যা পরবর্তীতে সন্ত্রাবাদের আকার পেয়েছে৷''

তিনি বলেন, উস্কানিদাতা হিসেবে উরবাখ বামপন্থি বিক্ষোভকারীদের মোলোটভ ককটেল এবং আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন৷

ফেব্রুয়ারির শেষে তৃতীয় প্রজন্মের সন্দেহভাজন আরএএফ সন্ত্রাসী সন্দেহে ডানিয়েলা ক্লেটেকে গ্রেপ্তারের পর তাদের নিয়ে আবারও নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে৷ সে প্রেক্ষিতেই আরএএফ-কে নিয়ে মন্তব্য করেছেলিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজা৷ দলটিকে ঘিরে এখন অধিকতর তদন্ত সম্ভব বলে জানিয়েছেন তিনি৷ বলেন, ‘‘আরএএফ এর হাতে হতাহত হওয়াদের পরিবারকে জবাব দেয়ার এই ঋণ আমাদের রয়ে গেছে৷’’ আরএএফকে কম-বেশি মোকাবিলা করতে হওয়া ১৫তম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তিনি৷ সম্ভবত তিনি এই অধ্যায়ের ইতি টানতে পারা শেষ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হবেন না৷

ক্রিস্টোফ স্ট্রাক/এফএস

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান