1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সারাদেশের নির্বাচনের প্রভাব সুপ্রিম কোর্টেও পড়েছে: মোরসেদ

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৪ মার্চ ২০২৩

সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন হয়ে গেল৷ পুলিশ দিয়ে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বের করে দিয়ে একতরফা ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়৷ সাংবাদিকেরাও সেখানে পুলিশের হাতে হেনস্থার শিকার হয়েছেন৷

https://p.dw.com/p/4PAUB
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ৷ 
পেশাজীবীদের নির্বাচন যে জমজমাট হতো সেটা সুপ্রিম কোর্ট বাদে অন্য জায়গায় ১০ বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে, বলছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ৷ ছবি: Privat

শুধু সুপ্রিম কোর্ট নয়, সবগুলো পেশাজীবী সংগঠনের নির্বাচন এখন একইভাবে হচ্ছে৷ পেশাজীবী নেতাদের রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির কারণেই কী পরিস্থিতি এই পর্যায়ে পৌঁছেছে? এখন এসব সংগঠনের গুরুত্বই বা কতটুকু? এসব বিষয় নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ৷ 

ডয়চে ভেলে : সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন হয়ে গেল৷ এটা কেমন হল?  

অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ : মিডিয়ার রিপোর্টগুলো যদি পড়েন তাহলে বুঝতে পারবেন নির্বাচন নিয়ে বেশ বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে৷ কারণ নির্বাচনে তো দুইটা পক্ষ থাকে, এই দুই পক্ষের বিপরীত অবস্থানের কারণে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে৷ একটা অংশ তো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি৷ নির্বাচনের কমিশন যখন করা হয়েছে, অর্থাৎ চিফ ইলেকশন কর্মকর্তাকে কেউ কেউ বলেন হুমকি দেওয়া হয়েছে৷ বা উনার পছন্দমতো কাজ করতে দেওয়া হয়নি৷ তখন উনি পদত্যাগ করেছেন৷ এরপর দুই পক্ষ দুইটা নির্বাচন কমিশন করেছে৷ এরপর একপক্ষ নির্বাচন করেছে, আরেকপক্ষ নির্বাচন করেনি৷ সেদিক থেকে বিবেচনা করলে এটাকে স্বচ্ছ নির্বাচন বলা যাবে না৷  

শীর্ষ আদালতের নির্বাচনের প্রভাব অন্য পেশাজীবীদের নির্বাচনে কতটা পড়ে?

শীর্ষ আদালতের নির্বাচনের প্রভাব অন্য প্রতিষ্ঠানে পড়ার দরকার নেই৷ অন্য প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনের যে সিস্টেম সেটা শীর্ষ আদালতেই প্রভাব পড়েছে৷

পেশাজীবীদের নির্বাচন আগে বেশ জমজমাট হতো৷ এসব নির্বাচন নিয়ে আগে কোন প্রশ্ন উঠত না৷ এখন প্রশ্ন উঠছে কেন?

পেশাজীবীদের নির্বাচন যে জমজমাট হতো সেটা সুপ্রিম কোর্ট বাদে অন্য জায়গায় ১০ বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে৷ শুধু সুপ্রিম কোর্টটা ছিল জমজমাট, সেটাও এই বছরের আগ পর্যন্ত৷ এটাও ধ্বংস হলো৷ কারণ পেশাজীবীদের মধ্যে রাজনীতি ঢুকে গেছে৷ পেশাজীবীরা রাজনৈতিক ইস্যুকে এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে৷

‘পেশাজীবীদের নির্বাচন যে জমজমাট হতো সেটা সুপ্রিম কোর্ট বাদে অন্য জায়গায় ১০ বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে’

সরকার কী পেশাজীবীদের সংগঠনগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে?

বর্তমান সরকার, আগের সরকার এরা দুইজন মিলেই পেশাজীবীদের বিভক্ত করার কাজটা সুচারুভাবে করেছে৷ এটার ইফেক্ট এখন আমরা দেখছি৷ বর্তমানে পেশাজীবীদের মধ্যে ঐক্যও নাই, কিছুই নাই৷ এখন পেশাজীবীদের পেশার উন্নয়নে কাজ করার কোন সুযোগ নেই৷ পেশায় থেকে তারা দলীয় অবস্থান, সুযোগ সুবিধা, দলীয় কাজকর্ম নিয়েই নেতারা ব্যস্ত থাকছেন৷ কারণ ওইখানেই তারা লাভবান হচ্ছেন৷

আগে পেশাজীবীদের নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতো, এখন সবখানে সরকার সমর্থকেরাই নির্বাচিত হচ্ছেন, এর কারণ কী?

আগে যারা নির্বাচন করতেন তারা পেশার লাভের জন্য কাজ করতেন৷ পেশাজীবীরাও ভোটে সেই সব নেতাকে নির্বাচিত করতেন৷ এখন মনে করা হয়, পেশাজীবী নিজেরা কিছু করতে পারবেন না, যদি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকে৷ অর্থাৎ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেই পেশার জন্য কিছু করা সম্ভব৷ এই ধারণা ও সংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছে৷ তার কারণে অনেকেই পেশার মধ্যে থেকেও রাজনীতিতে ঢুকে যাচ্ছেন৷ তারা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পেশাজীবীদের নেতৃত্ব দিতে চাচ্ছেন৷ এতে দু'টো জিনিস হচ্ছে, পেশাজীবীদের নেতৃত্ব উনি পাচ্ছেন৷ আর রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা, উপরে উঠা সেই সুযোগও পাচ্ছেন৷ সেই কারণে সবাই এখন এদিকে ধাবিত হচ্ছেন৷

পেশাজীবীদের নির্বাচন ধ্বংস হওয়ার মূল কারণ কী তাহলে দলীয় লেজুড়বৃত্তি?

নব্বইয়ের দশকে এরশাদ কিন্তু চেষ্টা করেছিলেন পেশাজীবীদের বিভক্ত করতে৷ তখন শামসুল হক চৌধুরী সুপ্রিম কোর্টের লিডার ছিলেন, তখন তাকে মন্ত্রী করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু উনি তা গ্রহণ করেননি৷ এই ধরনের চরিত্র এখন আর নেই৷ এখন যদি কাউকে মন্ত্রী করার প্রস্তাব দেওয়া হয় তাহলে তিনি পেশাজীবীদের সমস্ত স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে পরদিনই শপথ নিতে যাবেন৷ এই বৈশিষ্ট্যের লোকই এখন বেশি৷ এটা বিভিন্ন কারণে হয়েছে৷ রাজনীতি যারা করেন বা যারা সরকার পরিচালনা করেন তারা যেটা চেয়েছেন সেটাই সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে৷ পেশাজীবীদের বিভক্ত করলে সুবিধা আছে তো? পেশাজীবীরা যদি ঐক্যবদ্ধ হন, প্রতিবাদ করেন তাহলে সরকার আর সেখানে আগাতে পারে না৷ যারা রাজনীতি করেন তারা মনে করেন, পেশাজীবীরা একটা উটকো ঝামেলা৷ পেশাজীবীরা যদি মনে করেন এটা তারা করতে দেবেন না, তাহলে সরকার সেটা করতে পারে না৷ এই সমস্যা থেকেই তারা চিন্তা করেছেন পেশাজীবীদের বিভক্ত করে দেওয়ার, এবং সেটা তারা সফলভাবে করেছেন৷ এখন পেশাজীবীদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আর কোন বাধা নেই৷ এখন আর পেশাজীবীরা বলেন না এটা করা যাবে না৷ ফলে সরকার এখন রিলাক্স মুডেই আছে৷

এসব কারণে কী পেশাজীবী সংগঠন গুরুত্ব হারাচ্ছে?

অবশ্যই৷ সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনে সাংবাদিক, আইনজীবী সবাই মিলে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ করা হয়েছিল৷ সবাই মিলে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল৷ যার কারণে রাজনীতিবিদেরাও সফল হয়েছিলেন সামরিক শাসন পরিবর্তন করতে৷ একটা উদাহরণ হিসেবে বলি, সুপ্রিম কোর্টে যদি কোন অবিচার হয়, সুপ্রিম কোর্ট যদি সঠিকভাবে কাজ না করে সেক্ষেত্রে পেশাজীবীরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করাতে পারতো তাহলে সেটা সম্ভব ছিল না৷ এখন দেখেন সুপ্রিম কোর্টে একটা রায় নিয়ে যখন বিভক্তির সৃষ্টি হয়, যখন বলা হয় এই রায় বাইরে থেকে লিখে দেওয়া হয়েছে৷ তখনও কিন্তু পেশাজীবীরা ঐক্যবদ্ধভাবে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারেন না৷

জাতীয় রাজনীতি বা নির্বাচনের প্রভাব কতটা পড়ছে পেশাজীবীদের নির্বাচনে?

সারাদেশে যেভাবে নির্বাচন হয় তার প্রভাব সুপ্রিম কোর্টেও পড়েছে৷ পড়বে না, তা নয়৷ সারাদেশে যেভাবে নির্বাচন হয় সুপ্রিম কোর্টেও সেটা করতে চেয়েছে এবং সেটা হয়েছে৷

কীভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে এসব সংগঠনকে আরও বেশি কার্যকর করা সম্ভব?

রাজনৈতিক দলগুলোর বোধদয় হলে এটা কার্যকর করা যাবে৷ তারা যেন পেশাজীবীদের কাজে হস্তক্ষেপ না করে৷ তাদের বোধোদয় হলেই কেবল তখন সেটি সম্ভব হবে৷