1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাম যুবদের ডাকে ব্রিগেড ভরলো, সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ

৮ জানুয়ারি ২০২৪

দীর্ঘ ১৬ বছর পর আবার ব্রিগেডে জনসভা করলো সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই। লাখো মানুষের ভিড়ে ব্রিগেড ভরে গেল।

https://p.dw.com/p/4ayCI
ডিওয়াইএফআইয়ের ব্রিগেডের জনসভা।
ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড ভরে গিয়েছিল ডিওয়াইএফআই সমর্থকদের ভিড়ে। ছবি: Subrata Goswami/DW

ব্রিগেডে ডিওয়াইএফআইয়ের মঞ্চ ছিল ৩৬০ ডিগ্রির। অর্থাৎ, মঞ্চের চারপাশে মানুষ বসেছেন। সামনে, পিছনে, দুই পাশে শুধুই মানুষের মাথা। বহুদিন পর ব্রিগেডে কোনো যুব সংগঠনের এত বড় জনসভা হলো। যে ব্রিগেড ভরবে না বলে, রাজনৈতিক দলগুলি সচরাচর সেখানে জনসভা করতে চায় না, সেই ব্রিগেডেই সিপিএমের যুবরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে তা সফল করে দেখালো।

কোনো সন্দেহ নেই, লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে এই জনসভা ও তার আগে ৫০ দিনের ইনসাফ যাত্রা। কোনো সন্দেহ নেই, সাম্প্রতিককালে বামেদের কোনো জনসভায় এমন উন্মাদনা দেখা যায়নি। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রেনে, বাসে, গাড়িতে করে হাওড়া, শিয়ালদহে নেমে মিছিল করে ব্রিগেডে এসেছেন হাজার হাজার মানুষ।

হাওড়া ব্রিজ দিয়ে ডিওয়াইএফআই সমর্থকদের মিছিল।
হাওড়া ব্রিজ দিয়ে হাজার হাজার মানুষ মিছিল করে ব্রিগেডে ডিওয়াইএফআইয়ের সভায় এসেছে। ছবি: Subrata Goswami/DW

যুবরা মঞ্চ শাসন করছেন, আর বয়স্ক নেতারা মঞ্চের সামনে প্রথম সারিতে বসে আছেন, এমন দৃশ্যই বা সিপিএমে কবে দেখা গেছে? কুলটির গ্রাম থেকে আসা ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীণাক্ষি মুখোপাধ্যায়কেই এখন 'ক্যাপ্টেন' বলে মানছেন বিমান বসু থেকে শুরু করে যুব সংগঠনের সদস্যরা। ৫০ দিনের ইনসাফ যাত্রা থেকে ব্রিগেডের ওই বিশাল জনসভা এবং জনসভার ক্ষেত্রে সিপিএমের চিরাচরিত সূচি থেকে সরে এসে একগুচ্ছ নতুন জিনিসের সংয়োজন, সবই তো তারই পরিকল্পনা। তিনি যখন বলতে উঠলেন, তখন করতালির চোটে  ২৫ সেকেন্ড চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে হলো।

তাঁর চালু করা পরিকল্পনা মিডিয়া থেকে শুরু করে দলের সমর্থকরা আলোচনা করছে। কী এই বদল? সিপিএম বা তার সঙ্গে জড়িত কোনো সংগঠনের সভা সম্ভবত এই প্রথম শুরু হলো রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে। সেটাও 'বাংলার মাটি, বাংলার জল দিয়ে'। কিছুদিন আগে এই গানটিরই কিছু কথা বদল করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা রাজ্যসঙ্গীত করেছেন। কথাবদলের প্রতিবাদেই  এই গান দিয়ে সভা শুরু হলো। গণসঙ্গীতকে বাদ দিয়ে সমাবেশ শুরু হলো রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে।

মীণাক্ষি মুখোপাধ্যায়।
ভা,ণ দিচ্ছেন ডিওয়াইএফআইয়ের সাধারণ সম্পাদক মীণাক্ষি মুখোপাধ্যায়। ছবি: Subrata Goswami/DW

সিপিএম বা তার সংগঠনের কোনো সভায় এত জাতীয় পতাকার উপস্থিতি কে কবে দেখেছে? আগেকার দিনে তো এই ধরনের ঘটনাকে অতি জাতীয়তাবাদের চিহ্ন বলে দূরে সরিয়ে রাখতেন সিপিএম নেতারা। কিন্তু মীণাক্ষিরা বুঝেছেন, সময়ের সঙ্গে চলতে না পারলে নিরন্ধ্র নির্মম পতন হতে পারে। তাই তারাও পরিবর্তন করছেন। না হলে সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠ করে কবে বামেদের কোন মিটিং শেষ হয়েছে?

এভাবে সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসু-সহ সিপিএমের প্রবীণ নেতারা নিচে দর্শকের আসনে বসে এবং মঞ্চ দাপাচ্ছেন তরুণ-তরণীরা, সেটাও বা বাম সংগঠনের সভায় কবে দেখা গেছে। অনেকদিন পর বামেদের সভায় দেখা গেছে আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের বড় সংখ্যায় উপস্থিতি। দেখা গেল প্রান্তিক মানুষদের। দেখা গেল আনিস খানের বাবাকে, যিনি বললেন, তিনি ইনসাফ চাইতে এসেছেন।

প্রবীণ নেতারা নিচে বসেছিলেন।
মঞ্চের নিচে বসে সূর্যকান্ত মিশ্র-সহ প্রবীণ বাম নেতারা। ছবি: Subrata Goswami/DW

মীণাক্ষি বলেছেন, ''ওরা বলেছিল, খেলা হবে। আমরা সেই মাঠ দখল করতে এসেছি। এই লড়াইয়ের মাঠে জাত-ধর্ম বিষয় হবে না। বিষয় হবে রুটি-রুজি।'' তিনি বলেন, ''বিজেপি সবকিছু বেচে দিচ্ছে। রেল, নদী, জঙ্গল সব। তাদের হারাতে হলে বাঘের বাচ্চাদের লোকসভায় পাঠাতে হবে। যারা দেশ বাঁচাতে চায়, সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে চায়, তাদের পাঠাতে হবে।''

এরপর কী হবে?

ডিওয়াইএফআই মাঠ ভরিয়ে ফেলার পর আবার প্রশ্ন উঠেছে, এই ভিড়ের প্রতিফলন কি ভোটে পড়বে। এর আগে এইভাবে ব্রিগেড ভরিয়েও তো সিপিএম ভোটের সময় খুবই খারাপ ফল করেছিল। ডিওয়াইএফআই-এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ''আমরা বলছি, ভোট কোথায় জানেন না? পঞ্চায়েতে ভোট লুট হয়েছিল। লোকসভায় এবার পুরো ছবি দেখা যাবে। পাড়ায় পাড়ায় বুথ আগলাতে হবে।'' একই কথা বলেছেন সংগঠনের আরেক সাবেক সাধারণ সম্পাদক আভাস রায়চৌধুরী। এসএফআই নেতা সৃজন ভট্টাচার্য বলেছেন, এক ইঞ্চি জমিও ছাড়া হবে না।

ডিওয়াইএফআইয়ের ব্রিগেড সমাবেশের মঞ্চে ছিল জাতীয় পতাকা।
মঞ্চে উড়ছিল জাতীয় পতাকা। ছবি: Subrata Goswami/DW

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ''কেউ বলছে, সব কা সাথ, সবকা বিকাশ। কেউ ইনসাফ চাইছেন। ওরা বলছে, আমরা করে দেখাচ্ছি। ডায়মন্ড হারবারে আমরা এগুলিই করেছি।''

বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর মতে, ''ওরা নেতাইয়ে খুন করেছিল। খুনিদের আর কেউ পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আনবে না।''

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
ব্রিগেডের সমাবেশে ভাষণ দিচ্ছেন রাজ্য সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। ছবি: Subrata Goswami/DW

'কঠিন কাজ সামনে'

প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা বলেছেন, ''প্রস্তুতি নিয়ে ব্রিগেডে এত মানুষকে নিয়ে আসাটা নিঃসন্দেহে বড় সাফল্য। কিন্তু পরের কাজটা অনেক বেশি কঠিন। তৃণমূল ও বিজেপি-র সঙ্গে লড়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসন জেতা। সেটা করতে হলে, শুধু এই লাখ কয়েক মানুষ নয়, আরো অনেক বেশি মানুষকে পাশে পেতে হবে। আর মাস কয়েকের মধ্যে সেই কাজটা করে দেখানোটা বিশাল বড় চ্যালে়ঞ্জ।

সভার শেষে

সভার শেষে ফের মাইক হাতে নিয়ে মিনাক্ষী কর্মীদের উদ্দেশে ঘোষণা করলেন, ‘‘মাঠকে বাঁচাতে, সবুজকে বাঁচাতে, আমাদেরই সবকিছু পরিষ্কার করতে হবে।'' সবাইকে নিয়ে নিজেই নামেন ব্রিগেড পরিষ্কারে। মঞ্চ থেকে মাঠ, নেতা থেকে কর্মীর বিবিধ ভূমিকায় দেখা গেল তাঁকে।

সমাবেশের পর মাঠ পরিষ্কারের কাজ চলছে।
মাঠ পরিষ্কার করার কাজও করেছেন বাম যুব সংগঠনের কর্মীরা। ছবি: Subrata Goswami/DW

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)