1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাম যুব নেতার গাড়ি নিয়ে বিতর্ক

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৩০ মার্চ ২০২৩

বাম যুব নেতার ২২ লাখ টাকার গাড়ি নিয়ে বিতর্ক। বৈধ টাকায় কেনা গাড়ি নিয়ে কেন আক্রমণ শাসক দলের?

https://p.dw.com/p/4PTqi
শতরূপ ঘোষ
ছবি: Payel Samanta/DW

বামফ্রন্টের বড় শরিক সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য শতরূপ ঘোষ। তিনি বিধানসভা নির্বাচনে দলের প্রার্থী হয়েছেন। গণমাধ্যমে বলিয়ে-কইয়ে নেতা হিসেবে পরিচিত মুখ।

তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ একটি সাংবাদিক বৈঠকে দাবি করেন, বাম যুব নেতা ২২ লাখ টাকা দামের গাড়ি কিনেছেন। গাড়ি কেনা হয়েছে শতরূপের বাবার নামে। তার প্রশ্ন, "কমিউনিস্ট পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী কীভাবে এতো দামি গাড়ি কেনেন?" এই দাবির সপক্ষে কিছু নথি তুলে ধরেন কুণাল।

এর পরই সিপিএমের সদর কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠকে গাড়ি কেনার কথা স্বীকার করে নেন শতরূপ। তিনি দাবি করেন, তার বাবা এই গাড়ি কিনেছেন। এই সংক্রান্ত লেনদেনের যাবতীয় রসিদ তিনি তুলে ধরেন। সম্পূর্ণ সাদা টাকায় লেনদেন করা হয়েছে বলে তার দাবি।

কে ব্যক্তিগত জীবনে কী করবেন, কত টাকার গাড়ি চড়বেন, সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার বলে মনে করেন বাম নেতারা। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, "তৃণমূল নিজেদের দুর্নীতি ঢাকতে ব্যক্তিগত স্তরে আক্রমণ করছে। নজর ঘোরাতে চাইছে।"

‘দুর্নীতির টাকায় গাড়ি কেনা হয়েছে মনে হলে আঙুল উঠতে পারতো’

সুজনের স্ত্রী মিলি চক্রবর্তীর সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি সুপারিশের ভিত্তিতে হয়েছে, এই দাবি করেছে তৃণমূল। এই দাবিতে সিলমোহর দিয়েছেন সিপিএমের সাবেক দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক, পিডিএস নেতা সমীর পুততুন্ড। কিন্তু কোনো নেতার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে সওয়াল করা কতটা সমীচীন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এই বিষয়ে শতরূপ পাশে পেয়েছেন কংগ্রেস, এমনকী বিজেপি নেতাদেরও। জি ২৪ ঘণ্টা চ্যানেলকে কংগ্রেসের যুব নেতা আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "শতরূপ গাড়ি কেনার টাকার হিসেব দিয়েছেন। তৃণমূলের নেতারা এই হিসেব দিতে পারবেন?"

বিজেপি নেতা, কলকাতার পুর কাউন্সিলর সজল ঘোষের বক্তব্য, "শতরূপের নির্বাচনী হলফনামায় ঘোষিত সম্পত্তি বাড়েনি। তৃণমূল নেতাদের ঘোষিত সম্পত্তি ১৫-২০ গুণ বাড়ল কীভাবে, তার জবাব দিতে হবে।"

এ সব তর্কের সঙ্গে আরো একটি প্রশ্ন উঠে আসছে আলোচনার পরিসরে। শ্রমিক-কৃষকের নেতৃত্বে থাকা বামপন্থীরা পরিচিত সরল, অনাড়ম্বর জীবনের জন্য। প্রয়াত প্রমোদ দাশগুপ্ত, ভূপেশ গুপ্ত, ত্রিদিব চৌধুরীরা ছাড়াও কত অপরিচিত বাম নেতা রয়েছেন এই তালিকায়।

পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কিংবা বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর সাধারণ জীবনযাপন আজো অনুসরণীয় অনেকের কাছে। কোনো বাম নেতার ২২ লাখের গাড়ি চড়া আদর্শচ্যুতি কি না, সেই নৈতিক প্রশ্নটি উঠে আসছে।

শতরূপ নিজেই এর দায় নিয়ে জবাব দিয়েছেন, "কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হলেও সেই জীবনাদর্শ বা মূল্যবোধ আমি পুরোটা অর্জন করতে পেরেছি, এটা বলতে পারব না। সেজন্য আরো সময় লাগবে বলে আমি মনে করি।"

এই আত্মসমালোচনাকে চলতি সময়ের প্রেক্ষিতে দেখছেন প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র। তিনি বলেন, "বাঙালিদের কাছে দারিদ্র্য সবসময় মহান। কিন্তু ছেঁড়া জামা পরলে, সাইকেল চড়লেই সঠিক রাজনীতি করবেন? দুই লাখের গাড়ি হলে ভালো, ২২ লাখের খারাপ, এটা কে ঠিক করবে!"

সম্প্রতি টলিউড অভিনেতা বনি সেনগুপ্তের ৪৪ লাখ টাকার গাড়ি নিয়ে বিস্তর হইচই হয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত, বহিষ্কৃত তৃণমূল যুব নেতা কুন্তল ঘোষ এই গাড়ি কেনার টাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে।

বনিকে সেই গাড়ির টাকা ফেরাতে হয়েছে। শুভাশিসের বক্তব্য, "এ ভাবে দুর্নীতির টাকায় গাড়ি কেনা হয়েছে মনে হলে আঙুল উঠতে পারতো। তখন বিষয়টি ব্যক্তিগত থাকে না। এটা মূল বিষয় থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা।"