1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বরিশালে গাজীপুরের ভয়?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৮ জুন ২০২৩

বরিশালের সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ গাজীপুরের ভয় পাচ্ছে। গাজীপুরে তারা আগে পরিস্থিতি তেমন আঁচ করতে পারেনি। কিন্তু বরিশালে এখনই অনেক কিছু স্পষ্ট হয়েছে। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় নেতারা সেখানে অবস্থান করছেন।

https://p.dw.com/p/4SLZ3
প্রতীকী ফাইল ফটো
প্রতীকী ফাইল ফটোছবি: DW/M. Mostafigur Rahman

বরিশালে আওয়ামী লীগের ভিতরে দ্বন্দ্ব, বিএনপির সাবেক মেয়রের ছেলের প্রার্থী হওয়া, ইসলামী আন্দোলনের ভোট ব্যাংক আর জাতীয় পার্টির প্রার্থীর মাঠে থেকে যাওয়া ভোটের ফল কোন দিকে নিয়ে যায়, নির্বাচনের দিন ১২ জুনই তা বোঝা যাবে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলই সবচেয়ে বড় ভয়। বিদায়ী মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহর মনোনয়ন প্রকাশ্যে না বললেও কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। সাদিক আব্দুল্লাহর বাবা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ তার ছোট ভাইয়ের পক্ষে নির্বাচনী কাজ করলেও সেটাকে লোক দেখানো মনে করছেন অনেকে। আর সাদিক আব্দুল্লাহকে এখন পর্যন্ত তার চাচার পক্ষে কোনো প্রচারে দেখা যায়নি। এটা তার স্বেচ্ছায় দূরে থাকা না তাকে বিরত রাখা হয়েছে তা নিয়ে নানা কথা আছে। কিন্তু বরিশাল মহানগরীর ৩০ ওয়ার্ডেই আওয়ামী লীগের কমিটি সাদিক আব্দুল্লাহর নিজস্ব লোক দিয়ে করা। আর তিনি নিজে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর রাজনৈতিক পরিচিতি না থাকায় তিনি আওয়ামী লীগের সংগঠন বিহীন নেতা ও মেয়র প্রার্থীতে পরিণত হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারীরা তার জন্য কতটা কাজ করছেন বা করবেন তার নিশ্চয়তা নেই। যেমন হয়েছে গাজীপুরে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের বড় একটি অংশ নৌকার ব্যাজ লাগিয়ে কাজ করেছেন আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত নেতা জাহাঙ্গীরের মায়ের জন্য। ফলে নির্বাচনী প্রচারের ফল  আজমত উল্লা খানের ভোটের বাক্সে দেখা যায়নি।

বরিশালের তৃণমূল পর্যায়ের  কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, "নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে আমাদের মধ্যে ভয়ও তত বাড়ছে। আগে যেমন মনে করতাম নিশ্চিত আমাদের প্রার্থী জিতবে। এখন মনে করছি ফিফটি ফিফটি চান্স। ১২ জুন নির্বাচন। সেই পর্যন্ত এই চান্স আরো কমে যেতে পারে।  ইসলামী আন্দোলন এবং বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আমাদের জন্য বড় হুমকি। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে আওয়ামী লীগের অনেক ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা গোপনে অন্য দলের প্রার্থীর জন্য কাজ করছে। অনেকটা গাজীপুরের মতো।”

‘আমরা প্রকাশ্যে কোনো কোন্দল দেখতে পাচ্ছি না’

এনিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিও বেশ চিন্তায় আছে। তারা ওই ধরনের নেতাদের তথ্যও সংগ্রহ করছেন বলে জানা গেছে।

তৃণমূলে কয়েকজন বলেন, "আরেকটি বিষয় হলো আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জন্য যারা কাজ করছেন তারাও একটা অদৃশ্য ভয়ের মধ্যে আছেন। কারণ আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী নন। দলে তার প্রতিপক্ষরা অনেক শক্তিশালী। ফলে তারা ভবিষ্যতের দলীয় দলীয় রাজনীতিও মাথায় রাখছেন।”

তবে তার নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম বলেন, "দলের মধ্যে কোন্দল আছে কী না জানি না। তবে আমরা প্রকাশ্যে কোনো কোন্দল দেখতে পাচ্ছি না। সবাই ঐক্যবদ্ধ। কেন্দ্রীয় নেতারাও কাজ করছেন। আমাদের ১২৬টি কেন্দ্র আছে  সেই কেন্দ্রভিত্তিক কোনো কোন্দল নাই। যারা অতীতের নির্বাচনে এইসব কেন্দ্র পাহারা দিয়েছেন। কেন্দ্রে ভোটার নিয়েছেন তারা সবাই আমাদের সঙ্গে আছেন।”

তার কথা,"ভোটাররা বুঝতে পেরেছেন যে কী কারণে প্রার্থী পরিবর্তন করে প্রধানমন্ত্রী মেয়রের চাচাকে প্রার্থী করেছেন। তারা বুঝতে পেরেছেন এবার বরাদ্দের টাকা ঠিকমত খরচ হবে। ফলে আগের মেয়রের খারাপ কাজের প্রভাব তার ওপর পড়বে না।”

তিনি বলেন, "গাজীপুর আর বরিশাল এক নয়। এখানে বড় কোনো কোন্দল নেই।”

এদিকে বিএনপি থেকে বহিস্কৃত স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন এই সিটির বিএনপির সাবেক মেয়র আহসান হাবীব কামালের ছেলে । বরিশালে তার পিতার ব্যাপক প্রভাব আছে। সেটা তিনি কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। তিনি দল থেকে বহিষ্কার হলেও দলীয় নেতা-কর্মীরা তার জন্য কাজ করছেন বলে স্থানীয় পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে। যদিও মহানগর বিএনপিতে তার বিরুদ্ধে কয়েকজন নেতার অবস্থান স্পষ্ট। কিন্তু তাতে তার ভোট অন্যদিকে চলে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে না। কারণ  ৩০টি ওয়ার্ডেই বিএনপির বহিষ্কৃত কাউন্সিলর প্রার্থী আছেন। তারা তার জন্য কাজ করছেন।

কামরুল আহসান রুপণ বলেন, "আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও ভোটে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। আর আমাকে বহিষ্কার করাটাও অযৌক্তিক। কারণ বিএনপিতে আমার কোনো পদ নেই। আমি বিএনপি পরিবারের সন্তান। আমার বাবা সবেক মেয়র।”

তার কথা, "ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী নগরীর ভোটার ছিলেন না। পরে ভোটার হয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৪২ বছর ধরে মোংলা পোর্ট এলাকায় ছিলেন। এখানে ছিলেন না। তাকে বরিশালের লোকজন চেনেন না। আমি বরিশালে বড় হয়েছি। এই নগরীর মানুষ আমাকে চেনেন। তাদের আমি  চিনি। ফলে আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।”

আর বরিশাল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। দলটি বরিশালের চরমোনাইর পীর মরহুম সৈয়দ ফজলুল করিমের। তার ছেলে সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম বরিশালে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন।  স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের প্রার্থীরা ভালো ভোট পাচ্ছেন। গাজীপুরের নির্বাচনে তাদের প্রার্থী তৃতীয় হয়েছেন।

পাঁচ সিটির তফসিল ঘোষণার পর  থেকেই দলটি বরিশালকে টার্গেট করেছে। তারা এই একটি মেয়র পদ পেতে চায়। কারণ তাদের দলের মূল শক্তি বরিশালে। আর এ কারণেই তারা পীরের ছেলেকে প্রার্থী করেছে। স্থানীয় পর্যায়ে কথা বলে জানাগেছে,অন্যান্য দলের তৃণমূলের অনেক নেতা সুবিধা পেয়ে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর জন্য কাজ করছেন। আর শুরু থেকেই তারা ব্যাপকভাবে নির্বাচনী প্রচার করছে। তাদের নারী প্রচারকর্মীরাও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেন, "বরিশালের মানুষ আমার দাদাকে চেনেন, বাবাকে চেনেন। যারা শান্তি চায়, গুন্ডামি, দুর্নীতি চায় না তারা আমাকে ভোট দেবেন। অন্যান্য দলের তুলনায় একশ' ভাগের এক ভাগ অর্থও আমরা ব্যবহার করি না। আমরা নিজেরা অর্থ ব্যয় করি না। পাবলিক নিজেরা নিজেদের  অর্থ আমাদের নির্বাচনের জন্য ব্যয় করে। আমাদের কর্মীরা যারা কাজ করেন তাদের কোনো অর্থ আমরা দেই না। তারা জাতির খেদমত মনে করে কাজ করেন।”

এদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেনও মাঠে আছেন সক্রিয়ভাবে।

বরিশালে এখন যা ভোটের মেজাজ তাতে বিএনপির বহিস্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী বা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী-এই দুইজনই আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জন্য হুমকি। আওয়ামী লীগের কোন্দলে ভোট ব্যাংক ভাগ হওয়ার আশঙ্কা আর আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়রের নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির  প্রভাবও পড়তে পারে বর্তমান প্রার্থীর উপর।

এখন পর্যন্ত সব প্রার্থীরা সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা করেন। আর নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ফল নিয়ে আগাম কোনো সিদ্ধান্তে যাওয়া কঠিন। তবে অনেকেই বলছেন ভোটের ফল গাজীপুরের মতও হতে পারে।