1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
উদ্ভাবনচেক প্রজাতন্ত্র

পুরোনো ভবন সংস্কারের ব্রত নিয়েছেন দুই স্থপতি

৩০ মার্চ ২০২৩

পেশায় স্থপতি, অথচ নতুন ভবন তৈরি করায় অনীহা৷ দুই চেক স্থপতি পরিবেশ সংরক্ষণ, আর্থিক সাশ্রয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে নতুনের বদলে পুরোনো ভবনের সংস্কারের উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন৷

https://p.dw.com/p/4PTLK
প্রাগে নতুন চেহারা পাওয়া একটি পুরোনো ভবন
প্রাগে নতুন চেহারা পাওয়া একটি পুরোনো ভবনছবি: picture-alliance/blickwinkel/McPHOTO/BilderBox

স্থপতি হিসেবে ওন্দ্রেই চিবিক ও মিশাল ক্রিশটফ পুরানো ভবন বাঁচানোর ব্রত গ্রহণ করেছেন৷ ২০১২ সালে তাঁরা চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগ থেকে ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ব্র্যুন শহরে এক দফতর প্রতিষ্ঠা করেন৷ 

১৯৯২ সালে তৈরি একটি ভবনও সেখানে রয়েছে৷ আগে সেখানে গাড়ির দোকান ছিল৷ আজ এক চেক আসবাবের কোম্পানি ভবনটিকে শোরুম হিসেবে ব্যবহার করছে৷ গোটা ভবনটিকে কোম্পানির তৈরি ৯০০ প্লাস্টিক চেয়ার দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে৷

সেই সমাধানসূত্র শুধু অর্থ ও বিদ্যুৎ সাশ্রয় করছে না, কোম্পানির নিজস্ব পরিচয় আরও স্পষ্ট করে তুলে ধরছে৷ ভবনের ভেতরের অংশ সংস্কার করে আধুনিক রূপ দেওয়া হয়েছে৷ তিনটি বিভাজনযোগ্য অংশে কোম্পানির পণ্যের সম্ভার শোভা পাচ্ছে৷

একেবারে নতুন নির্মাণের তুলনায় ভবন সংস্কারের ব্যয়ের মাত্রা ছিল অনেক কম৷ তবে ওন্দ্রেই চিবিকের কাছে সেটাই একমাত্র জরুরি বিষয় নয়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার মতে, এমন তাজা এক ভবন ভেঙে ফেলার কোনো অর্থ হয় না৷ সেটা মোটেই টেকসই প্রক্রিয়া নয়৷ স্থাপত্যের প্রতি আমাদের মনোভাবের মাধ্যমে আমরা ভবনটি বাঁচিয়েছি৷ যেমনটা দেখছেন, সব উপকরণ রক্ষা করেছি৷ ভবনটি এখন সবার পরিচিত, একটা প্রতীক হয়ে উঠেছে৷ কেউ আর এই ভবনটি ধ্বংস করবে না৷''

৫০ জনেরও বেশি টিমসহ এই দুই স্থপতি মূলত ইউরোপেই বিভিন্ন প্রকল্পের রূপায়ন করেন৷ সেগুলির মধ্যে নতুন নির্মাণের প্রকল্পও রয়েছে৷ যেমন চেক প্রজাতন্ত্রের দক্ষিণে জনাইম শহরের কাছে ভিনিয়ার্ডের একটি ভবন৷ বর্তমানে তাঁরা চেক প্রজাতন্ত্রের সবচেয়ে উঁচু ভবন ‘ওস্ট্রাওয়া টাওয়ার'-এ কাজ করছেন৷ ২৩৫ মিটার উচ্চতার ভবনটির কাজ ২০২৭ সালে শেষ হবার কথা৷

পুরোনো ভবন ‘নতুন’ করেন তারা

তবে পুরানো ভবনের সংস্কারই দুই স্থপতির হৃদয় সবচেয়ে বেশি স্পর্শ করে৷ ওন্দ্রেই চিবিক বলেন, ‘‘আমার মতে, সভ্যতা হিসেবে আমরা ইতোমধ্যেই যথেষ্ট নির্মাণের কাজ করেছি৷ অস্তিত্ব রয়েছে, এমন কিছু নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে চাই৷ অতীতের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত প্রেক্ষাপট বোঝার চেষ্টা করে সেটির রূপান্তর বা তাতে সমসাময়িক কিছু যোগ করতে চাই৷''

দুই স্থপতির কাছে কোনো ভবনের ইতিহাস এবং ভবনটির উৎপত্তির সময়ের প্রতিফলনেরও মূল্য রয়েছে৷ এমনকি ব্রুটালিস্ট শৈলিতে তৈরি ব্র্যুন শহরের বাস স্টেশনেরও গুরুত্ব দেখেন তাঁরা৷ অনেকে সেটিকে দেশের সমাজতান্ত্রিক অতীতের কালো ছায়া মনে করেন৷ ওন্দ্রেই মনে করেন, ‘‘এমন ভবনেরও একটা সৌন্দর্য রয়েছে, সেগুলি আমাদের ইতিহাসের অংশ৷ সেগুলি ভেঙে ফেলার অর্থ আমরা যেন আমাদের ইতিহাসের এই অংশ এড়িয়ে যাচ্ছি৷ আমার মতে, সেটা ভুল হবে৷''

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ১৯৮৮ সালে তৈরি রেল স্টেশনের বেহাল অবস্থা হয়েছিল৷ ছাত্র বয়সে দুই স্থপতিই সেই স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করেছেন৷ ২০১১ সালে তাঁরা স্টেশন ভবনের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন৷ ওন্দ্রেই চিবিক বলেন, ‘‘একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের শহরের এমন গুরুত্বপূর্ণ এক জায়গা এত খারাপ অবস্থায় রয়েছে জেনে আমার খুব লজ্জা হয়েছিল৷ অবস্থার উন্নতি করতে সাহায্য করতে পেরে আমরা খুশি৷''

স্টেশনের সংস্কারের জন্য তাঁদের হাতে সব মিলিয়ে ৫০ লাখ ইউরো ছিল৷ সেই কাজের আওতায় তাঁরা ছাদের কাঠামোয় সাদা রং করেছেন, নতুন আলোকসজ্জা বসিয়েছেন, এনট্রেন্স হল বানিয়েছেন এবং প্ল্যাটফর্মের নতুন বিন্যাস করেছেন৷

ওন্দ্রেই চিবিকের কাছে সেই কাজ মোটেই স্থাপত্যের মাইলফলক ছিল না৷ শহরের মানুষের জন্য উন্নতি আনাই ছিল সেই প্রয়াসের লক্ষ্য৷ তিনি বলেন, ‘‘পেশাদার ব্যক্তি ও স্থপতি হিসেবে আমাকে নিজেদের বিশেষ ক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস রাখতেই হয়৷ আমরা ঠিকমতো ও সাফল্যের সঙ্গে কাজ করলে সেই উদ্যোগ হয়তো সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে অবদান রাখতে পারে৷

চিবিক ও ক্রিশটফ দেখিয়ে দিচ্ছেন, যে তার জন্য সব সময়ে নতুন ভবনের প্রয়োজন হয় না৷

রুবেন কালুস/এসবি