1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পুজো-রাজনীতি: বামেদের বইয়ের স্টল ভাঙচুর, গ্রেপ্তার

৪ অক্টোবর ২০২২

উৎসবেও উজ্জ্বল রাজনীতি। উৎসবের মধ্যেও বিরোধী দলের বইয়ের স্টলে ভাঙচুর। সিপিএমের একাধিক নেতা, বুদ্ধিজীবী গ্রেপ্তার।

https://p.dw.com/p/4Hhq7
প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি। ছবি: Satyajit Shaw

শারদোৎসবেও পিছু ছাড়ে না রাজনীতি। শারদোৎসবেও থাকে বিরোধী স্বর দমন করার চেষ্টার অভিযোগ। আর বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনাই প্রমাণ করে দেয়, প্রদীপের নীচে অন্ধকারের মতো, শারদোৎসবের উজ্জ্বল আলোর নীচেও রয়েছে রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতার চোরা স্রোত। না হলে বিরোধী বামেদের বইয়ের স্টল এবং তাতে একটি পোস্টার নিয়ে কি করে তুলকালাম হতে পারে কলকাতায়? তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হতে হয়েছে সিপিএম সাংসদ ও আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য, পরিচালক কমলেশ্বর ভট্টাচার্য-সহ একগুচ্ছ সিপিএম নেতাকে।

ঘটনার সূত্রপাত সপ্তমীর দিন। রাসবিহারী অ্যাভিনিউ ও প্রতাপাদিত্য রোডের মোড়ে সিপিএমের একটি বইয়ের স্টল ঘিরে। ওই স্টলে একটা পোস্টার ছিল, 'চোর ধরো, জেল ভরো'। ওই পোস্টার দেখেই রাজ্যের ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের রাগ হয় বলে অভিযোগ। তার ফলশ্রুতি, বইয়ের দোকানে ভাঙচুর। অষ্টমীতে আবার ওই জায়গায় বইয়ের স্টল তৈরি করতে যান ,সিপিএম নেতারা। তারা প্রতিবাদসভাও করেন। সেখান থেকেই বিকাশ, কমলেশ্বর-সহ অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূলের কর্মীরা বারবার ভাঙচুর করলেও তাদের ধরা হয়নি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে সিপিএম নেতাদের। পুলিশের বক্তব্য, বইয়ের স্টল করা নিয়ে স্থানীয় পুজোর উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সিপিএমের বিরোধ চলছিল। শান্তিভঙ্গ হওয়ার আশঙ্কায় পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। তৃণমূল বলছে, মানুষের অসুবিধা করে ভিড়ের মধ্যে কেন বইয়ের স্টল করা হবে?

একটা বইয়ের স্টল থেকে কী করে শান্তিভঙ্গ হবে? প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''বইয়ের স্টল তো সিপিএম আজ থেকে করছে না। দীর্ঘ ৩৪ বছরের শাসনে সামান্য কয়েকটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে সিপিএম তথা বাম নেতারা সাধারণত পুজোর আয়োজনের মধ্যে থাকতেন না। কিন্তু তারা মণ্ডপের কাছে বইয়ের স্টল দিতেন।'' আশিস জানিয়েছেন, ''সেখানে নিয়মিত বসতেন বিমান বসু-সহ দলের শীর্ষ নেতারা। ক্ষমতা হারানোর পরেও তারা বইয়ের স্টল দিচ্ছেন। গতবারও প্রচুর স্টল দিয়েছেন। শান্তিপূর্ণভাবে স্টল দেয়া নিয়ে কার কী আপত্তি থাকতে পারে? কলকাতায় রাস্তা বন্ধ করে পুজো করলেও তো অসুবিধা হয় না? গত ১১ বছরে তো বামেদের স্টল নিয়ে কোনো অসুবিধা হয়নি!''

লোকমতের রাজনৈতিক সম্পাদক শরদ গুপ্তা মনে করেন, ''বিরোধীরা পুজো করলে তাদের মণ্ডপে আলোর খেলা বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ উঠবে, তাদের বইয়ের স্টলও রাখা হবে না, এ কোন অসহিষ্ণুতার পুজো দেখছি আমরা?'' শরদের প্রশ্ন, ''পুজোও কি শুধুই ক্ষমতাসীনদের পুজোতে পরিণত হবে? উৎসব সকলের। প্রকৃত অর্থেই সকলের। বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী সবার।''

আশিস ও শরদ বলছেন, ''উৎসবে রাজনীতির রঙ বিবেচ্য নয়, বিচার্য হচ্ছে ভাললাগার রঙ, ভালোবাসার, সম্প্রীতির, সৌর্ভ্রাতৃত্বের রঙ। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তকমা পাওয়া এই পুজোর মধ্যে দয়া করে সংকীর্ণতা ঢুকতে দেবেন না। রাজনৈতিক নেতারা পুজো করুন। কিন্তু সেখানে রাজনীতির রঙ যেন প্রবেশ না করে, সেই পুজো যেন উৎসেবর প্রতীক হয়। রাজ্যে যে দুর্নীতি, বেনিয়মের ভয়ংকর অভিযোগ উঠছে, তার ছোঁয়া থেকে পুজো বাদ থাক।''

কলকাতার থিমের পুজো

তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, ''পুজোর ভিড়ে স্টল খুলতে হবে কেন? পরে রোববার দেখে ওরা এসব করতে পারেন।'' আশিস বলছেন, পুজোয় তো জাগো বাংলার স্টলও খোলা হয়। আর বইয়ের স্টল কবে খুলতে হবে, সেটাও ঠিক করে দেবেন ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতা? তারাই বলে দেবেন, বিরোধীরা কী করে জনসংযোগ করবেন? তারা ফতোয়া দেবেন, কোন বই বা কাগজ পড়বে মানুষ, অথবা পুজোর দিনে, উৎসবের দিনে বইয়ের স্টল কারা দেবে, মানুষ কাদের কাছে বই কিনবেন?

কমলেশ্বরকে গ্রেপ্তার করার পর পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় টুইট করে বলেছেন, ''বইকে ভয়? কমলেশ্বরকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে নিন্দার ভাষা নেই। যে কোনো মূল্যে কমলেশ্বরের পাশে থাকব। ''অন্য বুদ্ধিজীবীরা অবশ্য অধিকাংশই নীরব আছেন।

জিএইচ/এসজি (পিটিআই, আনন্দবাজার)