1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘গায়েবি মামলায়’ গ্রেপ্তার, সাজা আর ‘বিশ্বাসঘাতকতা’

৩১ ডিসেম্বর ২০২৩

বছরের শেষদিনেও ঢাকার আদালতপাড়া সরগরম ছিল বিএনপির নেতাকর্মী আর তাদের আইনজীবীদের ভিড়ে৷ অনেকের ‘সাজানো, গায়েবি মামলায়' সাজা হচ্ছে৷ এদিকে মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল ক্ষমতাসীন দলকে বিশ্বাসঘাতকতা না করার আহ্বান জানিয়েছেন৷

https://p.dw.com/p/4akWp
হাতকড়া পরিয়ে আদালতে হাজির করা হয় একজনকে
গত দুই মাসে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ২৩ হাজার ৪৬০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছেছবি: Arafatul Islam/DW

পুরান ঢাকায় চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে রোববার দেখা মিললো বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মীর আত্মীয়স্বজন এবং তাদের আইনজীবীদের৷ তাদের চোখেমুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট৷ গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর গ্রেপ্তার হয়েছেন দলটির ছোটবড় অনেক নেতাকর্মী৷ একই সময়ে পুরাতন মামলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের সাজাও দেয়া হচ্ছে অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে৷

ঢাকার সংবাদমাধ্যমে বিএনপিকে উদ্ধৃত করে যে পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ২৩ হাজার ৪৬০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ এ সময়ে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৬৮৪টি মামলা হয়েছে৷ আর গত ১৬ সপ্তাহে এক হাজার ৪৮২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে৷ একই সময়ে অন্তত আটজন বিএনপি কর্মীর কারাগারে মৃত্যু হয়েছে৷

এই পরিসংখ্যান প্রতিনিয়তই পরিবর্তন হচ্ছে৷ আদালত পাড়ায় কথা হলো বিএনপিপন্থি একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে৷ তাদের বক্তব্য হচ্ছে, ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকেন্দ্রিক নানা ঘটনায় হওয়া মামলাগুলোতে যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তাদের অধিকাংশই জামিন পাচ্ছেন না৷ হাতেগোনা যে কয়েকজন জামিন পেয়েছেন তাদের নির্দিষ্ট কারণে জামিন দেয়া হয়েছে৷

আইনজীবী মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ একসময় ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন৷ তিনি জানান যে বিএনএফের ১১ সদস্য এবং বিএনপির শাজাহান ওমরকে জামিন দেয়া হয়েছিল কেননা তারা নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি হয়েছিলেন৷

‘‘এটা ছাড়া সিএমএম আদালত আর জজকোর্ট থেকে আমাদের কোনো আসামিকে জামিন দেয়া হচ্ছে না,’’ বলেন তিনি৷

ইলতুৎমিশ যোগ করেন, ‘‘সহিংসতা কারা করেছে সেটা তদন্তের ব্যাপার৷ আমাদের কথা হচ্ছে, যদি এটা প্রমাণিত হয় যে কেউ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, ঘটনা ঘটিয়েছে তাহলে তার সাজা হবে, শুনানি হবে৷ কিন্তু জামিন পাওয়াটাতো আমার অধিকার৷ সেই অধিকার থেকে আমাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে৷''

আদালত প্রাঙ্গনে কথা হলো সুরুজ্জামানের সঙ্গে৷ তার দাবি, তুরাগ থানায় ২০১৮ সালের আগস্ট, সেপ্টেম্বর মাসে করা ‘গায়েবি মামলায়' শতভাগ আসামিকে সাজা দেয়া হয়েছে৷ তাকেও সাজা দেয়া হয়েছে৷

নিজের চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিপত্র হাতে নিয়ে ঘুরছিলেন তিনি৷ তার বক্তব্য, যে সময় তাকে আসামি করা হয়েছিল সেসময় তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন৷

‘‘বিচারব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে গেছে৷ এখানে স্বাধীনভাবে কোনো বিচার হচ্ছে না,'' বলেন তিনি৷

সাজানো, গায়েবি মামলার যে কথা বিএনপির নেতাকর্মী, আইনজীবীরা বলছেন তার অসংখ্য উদাহরণ বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে৷ তাতে অবশ্য পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না৷ বরং সেসব মামলায় শাস্তির উদাহরণ ক্রমশই বাড়ছে বলে মনে করছেন অনেক আইনজীবী৷ 

সিএমএম কোর্ট প্রাঙ্গনে দুই প্রার্থীর পোস্টার
সিএমএম কোর্ট প্রাঙ্গনে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর পোস্টার ছবি: Arafatul Islam/DW

ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের শেষ মাথায় বসবাস করেন মানবাধিকারকর্মী এডভোকেট সুলতানা কামাল৷ বাংলাদেশের সুশীল সমাজের অত্যন্ত প্রভাবশালী একজন ব্যক্তি তিনি৷ ব্যক্তিজীবনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বান্ধবী তিনি৷

তবে, ব্যক্তিগত পরিচয়কে নিজের নৈতিক অবস্থানের সঙ্গে মেলাতে রাজি নন তিনি৷ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বেশ সরব সুলতানা কামাল

ডয়চে ভেলের সঙ্গে রোববার আলাপকালে বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারে বিষয়েও খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি৷ সুলতানা কামাল বলেন, ‘‘এত অপরাধ কি সংগঠিত হয়েছে এই কয়দিনে? তাহলে আমাদের গোয়েন্দা বাহিনীগুলো কী করে, পুলিশের কাজটা কী? চিহ্নিত করে তারপরেতো অপরাধীদের ধরবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘যেকোনো মানুষকে ধরে নিয়ে তারপর অপরাধী প্রমাণ করাটাতো আইনের সম্পূর্ণ লঙ্ঘন, মানবাধিকারের লঙ্ঘন৷ সেটাতো তারা করতে পারে না৷’’

সম্প্রতি বিএনপির অন্তত আট কর্মীর কারাগারে মৃত্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এই সমস্ত ঘটনার প্রত্যেকটির সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত৷ যদি না হয় তাহলে অবশ্যই সরকারকে এর দায় বহন করতে হবে৷’’

ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে এমন আশা করছেন না এই মানবাধিকারকর্মী৷ বরং সরকার কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরো কঠোর হতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কার কথা প্রকাশ করলেন তিনি৷

বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের প্রতি ইঙ্গিত করে সুলতানা কামাল বলেন, ‘‘তারাতো দাবি করেন তারা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি৷ আমি তাদের কাছে জোর দাবি জানাবো যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অপমান করবেন না, অসম্মান করবেন না, অবমাননা করবেন না৷’’

‘‘আপনারা যেহেতু দাবি করেন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি আপনারা, তাই যতটা সম্ভব পারেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কাছাকাছি যান, সেই চেতনার আলোকে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশ চালাবেন বলেন৷ সেই আদর্শে দেশ চালানোর চেষ্টা করেন,'' বলেন তিনি৷ 

সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘কারণ আপনারা যা কাজ করছেন সেগুলো যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে চিহ্নিত হয়ে যায়, আপনারা চরম অবিচার করবেন৷ এবং আমাদের প্রতি এটা একটা বিশ্বাসঘাতকতা হবে৷''

বর্তমান সরকার অবশ্য বারবার বলে আসছে অতীতে রাজনৈতিক সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের সাজা দেয়া হচ্ছে এবং নতুন যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তারাও নানা সহিংসতার সঙ্গে জড়িত৷ তবে রাজনৈতিক মামলায় ঠিক কতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বা সাজা দেয়া হচ্ছে তা নিশ্চিত করেনি সরকার৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান