1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খাদ্যে ভেজাল ঠেকাতে প্রয়োজন সমন্বিত তদারকি

তানজির মেহেদি
৯ জুন ২০১৯

রমজান এলে ভেজাল বিরোধী অভিযান বছরের অন্য সময়ের তুলনায় বেশি চোখে পড়ে৷ ব্যতিক্রম হয়নি এবারও৷ কিন্তু তাতেও কমছে না ভেজালের দৌরাত্ম্য৷ সংশ্লিষ্টদের মতে, এর জন্য প্রয়োজন সমন্বিত তদারকি৷

https://p.dw.com/p/3K2os
Iftar Ramadan in Dhaka Bangladesch
ছবি: picture-alliance/dpa

গেল ২ মে অর্থাৎ রমজানের ঠিক আগে, এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) জানায়, খোলা বাজার থেকে ২৭ ধরনের ৪০৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে সংস্থাটি৷ এর মধ্যে ৫২টি নিম্নমানের ও ভেজাল পণ্য চিহ্নিত করে তারা৷

বাজার থেকে পণ্যগুলো সরিয়ে নিতে গড়িমসি ছিলো উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর৷ শেষ পর্যন্ত দ্বারস্থ হতে হয়, উচ্চ আদালতের৷ ১২ মে এসব খাদ্যপণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহারের পাশাপাশি, বিক্রি ও সরবরাহে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতি নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট৷

নষ্ট হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক সুনাম: হেলাল

কিন্তু সেখানেই শেষ নয়! এর মধ্যে আদালতের রায় নিয়ে কয়েকটি পণ্য পুনরায় বাজারে এসেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীন৷ তাঁর মতে, সরকারি সংস্থাগুলো যে পদ্ধতিতে অভিযান পরিচালনা করছে সেটা বিজ্ঞানভিত্তিক নয়৷ তাই অভিযানে যে পণ্য ভেজাল বলে চিহ্নিত হয়েছে, সেটাকে আবার আদালত ছাড়পত্র দিচ্ছে৷

অভিযান নিয়ে ব্যবসায়ীদের ক্ষোভের আরো কারণ তুলে ধরেন হেলাল উদ্দীন৷ তাঁর দাবি, ভেজাল বিরোধী অভিযান নিয়ে এতো বেশি নেতিবাচক প্রচারণা হয়, যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রপ্তানি বাণিজ্য৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘ফ্রিজে পড়ে থাকা কোনো খাদ্য উপকরণ একটু দূর্বল হতেই পারে৷ কিন্তু সেটা ভোক্তাদের কাছে দেয়া হয় না৷ অথচ সেই অজুহাতে প্রতিষ্ঠানটি পড়ছে জরিমানার মুখে, নষ্ট হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক সুনাম৷''

দোকান মালিকদের দাবি, নমুনা সংগ্রহের মাধ্যমে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া হোক৷

অবৈজ্ঞানিক বলা যাবে না: আরিফিন

ব্যবসায়ীদের এই অভিযোগকে একেবারেই নাকচ করে দিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মাসুম আরিফিন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘উচ্চ প্রযুক্তির কিছু পণ্যের ঘাটতি হয়তো তাদের আছে, কিন্তু তাই বলে পদ্ধতিকে অবৈজ্ঞানিক বলা যাবে না৷''

চলতি বছর এ পর্যন্ত সারাদেশে ৬ হাজার ৭০০ অভিযান পরিচালনা করেছে সংস্থাটি৷ আরিফিনের দাবি, ভেজাল বিরোধী অভিযান অব্যাহত আছে বলেই পরিস্থিতির ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে৷

এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ যদি পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে নতুন করে পরীক্ষা করার কোনো অর্থ নেই৷ তবে, কোনো খাদ্যপণ্যে ফরমালিন আছে কিনা, থাকলে কি পরিমাণ আছে--এসব বিষয়ে নিশ্চিত হতে পরীক্ষাগারের প্রয়োজন হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘পণ্যের ওপর নির্ভর করে পরবর্তী পরীক্ষা নিরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন তারা৷ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ নাকচ করে তিনি আরো বলেন, প্রতিটি অভিযানে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে রাখা হয়৷'' বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই, একজন ম্যাজিস্ট্রেট সিদ্ধান্ত নেন বলে উল্লেখ করেন তিনি৷

ভেজাল বিরোধী এসব অভিযান বছরের অন্য সময়ের তুলনায় রমজানে প্রকট হয় কেন?—জানতে চাইলে ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘‘রমজানের সময় অসাধু ব্যবসায়ীদের দুষ্কর্ম বাড়ে, ফলে অভিযানের সংখ্যাটাও এসময় বাড়ানো হয়৷'' তাঁর যুক্তি, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকারের যে অঙ্গীকার, তারই আলোকে অভিযানের সংখ্যা বেড়েছে৷ এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে সংকট দূর হবে বলেও মন্তব্য তার৷ পাশাপাশি, বিদ্যমান আইন সংস্কার করে সেগুলো আরো কঠোর করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি৷

রমজানে অসাধু ব্যবসায়ীদের দুষ্কর্ম বাড়ে: রহমান

খাদ্যে ভেজাল ঠেকাতে হলে, আমদানি পণ্যগুলো প্রবেশ মুখে পরীক্ষা করে বাজারে ছাড়া এবং ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের ডেটাবেজ তৈরি করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম৷ পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মান নিয়ন্ত্রণ শাখাকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি সমন্বিত তদারকি নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি৷

নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে, ২০১৮ সাল থেকে ২ ফেব্রুয়ারি কে নিরাপদ খাদ্য দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হচ্ছে৷ চলতি বছর দিবসের আয়োজনে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেই ঘোষণা দিয়েছন, দুর্নীতি বিরুদ্ধে তার সরকার যেমন সোচ্চার, ঠিক তেমনি খাদ্যে ভেজাল ঠেকাতেও চলমান থাকবে অভিযান৷ পাশপাশি সাধারণ মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন হবার আহ্বান জানান তিনি৷ ৬মার্চ সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিয়ে, ফের একই ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য