1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আমাদের অর্থনীতি, আইএমএফের শর্ত এবং এবারের বাজেট

রাজিক হাসান
১০ জুন ২০২৩

‘‘বাকি রাখা খাজনা, মোটে ভালো কাজ না৷’’ ‘‘ভর পেট নাও খাই, রাজকর দেওয়া চাই’’৷

https://p.dw.com/p/4SMyf
বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল৷
ফাইল ছবি৷ছবি: Xinhua News Agency/picture alliance

বিখ্যাত এই উক্তি আগের দিনের বাংলার জমিদারদের প্রধান উপজীব্য৷ খাজনা আদায়ের আনন্দে একমাত্র তাদের কাছেই এটি ছিল বড় মধুর সময়৷ এই উদ্দেশ্যে বাংলা বছরের প্রথম দিনে অর্থাৎ বৈশাখের পয়লা তারিখে ঘটা করে পালিত হতো একটা গোটা উৎসব-রাজ পুণ্যহ (রাজকর আদায়ের উৎসব)৷ বলা বাহুল্য, প্রজাদের অর্থশোক ভোলাতে চোখের জলে ভেজা পুণ্যহর মধ্যে সুচতুর ভাবে মেশানো হত এই উৎসবের রঙ৷ উৎসবকে ঘিরে হতো মিষ্টিমুখ, থাকতো গান-বাজনা, যাত্রাপালা, মেলার আয়োজন৷ এসবই হতো প্রজাদেরই খাজনার পয়সায়৷ প্রজারা তখন ফেলে আসা বছরের বকেয়া খাজনা পরিশোধ করতে একপ্রকার বাধ্য৷ এই দিনই খাজনা মিটিয়ে জমিদারের কাছারি থেকে নতুন বছরের বন্দোবস্ত ছিল বাধ্যতামূলক৷ তাই নতুন হালখাতার পিছনে প্রছন্ন থাকতো প্রজাদের চোখের জলের নববর্ষ৷

‘‘খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি’’-মনে রাখতে হবে, সে কথাও৷ এর মানে হল, অনেক আড়ম্বর হল, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হল, তেমন কিছুই আদায় হল না৷ বাংলাদেশের জন্য এ কথা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ কর আদায় নিযুক্ত কিছু ব্যক্তিদের নিজেদের পকেটে যখন চলে যায় করযোগ্য আয়ের বিরাট অংশ ঘুসের মাধ্যমে৷

দিন পাল্টেছে৷ এখন সেই খাজনার হিসেব আগের মতো নেই৷ এখন সেই হিসেব হয় অর্থ বছর ও কর বছরে৷ অর্থ বছরের শুরুতেই সরকার তার আয়-ব্যয়ের একটি প্রস্তাব পেশ করে সংসদে৷ অর্থাৎ বাজেট হল একটি সামনের বছরে পরিকল্পিত আয়-ব্যয়ের একটি প্রস্তাবনা৷

সরকারকে দেশ চালাতে হয়, সরকারের হয়ে যারা কাজ করেন, তাদের বেতন দিতে হয়, আবার নাগরিকদের উন্নয়নের জন্য রাস্তাঘাট বানানোসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নিতে হয়৷ সুতরাং একটি নির্দিষ্ট অর্থবছরে কোথায় কত ব্যয় হবে, সরকারের আয় কিভাবে হবে সেই পরিকল্পনার নামই বাজেট৷

বাংলাদেশে এ বছর এমন এক সময়ে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে, যখন দেশটিতে চরম মূল্যস্ফীতি এবং আর্থিক সংকট চলছে, সেই সঙ্গে বছর শেষে হতে যাচ্ছে জাতীয় নির্বাচন৷ বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদেরা ধারণা করছেন, অন্য সব বছরের তুলনায় এ বছরের বাজেট কিছুটা চ্যালেঞ্জের হয়ে উঠবে৷ সরকারকে একদিকে জাতীয় নির্বাচনের কথা বিবেচনায় রেখে জনতুষ্টির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্তগুলো বাস্তবায়নেরও চাপ থাকবে৷

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতি বজায় রাখার লক্ষ্যে সম্ভাব্য বাজেটের আকার হবে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা৷ জানা গেছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ বেশি৷ চলতি অর্থবছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা৷ অর্থাৎ, নতুন অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়বে ৬০ হাজার কোটি টাকা৷

এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রার পাশাপাশি এনবিআর বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা আর কর বহির্ভূত রাজস্ব (এনটিআর) আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা৷ আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক থেকে এ রাজস্ব আদায় হবে৷ জানা গেছে, নতুন বাজেটে দেড় লাখ কোটি টাকা আয়কর হিসেবে আদায়ের পরিকল্পনা করছে রাজস্ব বোর্ড৷ এরই ধারাবাহিকতা করমুক্ত আয়সীমা ও কর জাল বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷

দেশের কর জিডিপির অনুপাত প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশের নিচে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন৷ দেশে প্রদেয় করদাতার অধিকাংশই শহরকেন্দ্রিক৷ অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ নিয়েছে সরকার৷ শর্তস্বরূপ রাজস্ব খাতে বড় ধরনের সংস্কার করতে হবে, বাড়াতে হবে কর জিডিপি৷ আইএমএফের আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ বাড়তি কর আদায় করতে হবে৷

জানা যায়, আগামী অর্থবছর গ্রামাঞ্চল থেকে কর সংগ্রহ করতে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত বেসরকারি কর সংগ্রহ এজেন্ট নিয়োগের কথা ভাবছে সরকার৷

রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গ্রামের মানুষকে করজালের আওতায় আনতে উন্নত দেশের মতো বিভিন্ন জেলায় কর এজেন্ট নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে৷ নতুন কর এজেন্টরা নতুন করদাতাদের সাহায্য করবে৷ ই-টিআইএন থাকা সত্ত্বেও যারা এখনো রিটার্ন জমা দেননি, তাদের রিটার্ন প্রস্তুত করতেও সহায়তা করবে৷

প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে বাজেটের অর্থ বিলে ‘ইনকাম ট্যাক্স প্রিপেয়ারার (আইটিপি)’ নামে একটি নিয়ম অন্তর্ভুক্ত করা হবে৷

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, ট্যক্স-জিডিপি রেশিও কেন কম হচ্ছে, কোথায় লিকেজ হচ্ছে- এটার ওপর স্ট্যাডি করা প্রয়োজন৷ জাতীয় সংসদ থেকে এটা আলোচনা হওয়া দরকার৷ আমাদের জিডিপি বাড়ছে, কিন্তু সে তুলনায় কর আদায় হচ্ছে না৷ পরীক্ষামূলকভাবে কর এজেন্ট নিয়োগ করা উচিত৷ এ উদ্যোগ করদাতাদের সচেতন করবে৷

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে শূন্য রিটার্ন জমা দিলেও দুই হাজার টাকা আয়কর দেওয়ার বিধান রাখছে রাজস্ব বোর্ড৷

করদাতারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে না পারলেও পরে বছরের যে কোনো সময়ে জরিমানা ও সুদ পরিশোধ করে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিতে পারবেন৷ এক্ষেত্রে রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য ডিসিটির (ডেপুটি কমিশনার অব ট্যাক্সেস) কাছে সময় বাড়ানোর আবেদনও করা লাগবে না৷ তবে এক্ষেত্রে জরিমানা ও সুদের হারে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে৷

রাজস্ব কর্মকর্তারা বলছেন, ১৬ কোটি জনসংখ্যার দেশে বর্তমানে বাংলাদেশে ৮৮ লাখ মানুষের কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন রয়েছে৷  গত বছর আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন ৩২ লাখ মানুষ৷ সরকার নতুন অর্থ বছরে যে বিপুল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, সেটা পূরণে নূন্যতম আয়কর আদায়ের এই পথ সরকার নিয়েছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন৷

বাজেট ঘোষণার পরেই প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন ওই প্রস্তাবনার সমালোচনা করে বলেন, ‘‘যার করযোগ্য আয় নেই তার জন্য কর বাধ্যতামূলক করা বৈষম্যমূলক ও অন্যায্য৷ মানুষের জন্য বোঝা হয়ে যাবে৷’’

রাজিক হাসান, গবেষক ও প্রাবন্ধিক
রাজিক হাসান, গবেষক ও প্রাবন্ধিকছবি: Privat

তিনি বলেছেন, ‘‘যে কর দেওয়ার যোগ্য, ক্ষমতা-আয় আছে সেই তো কর দেবে, কিন্তু যার নাই তার ওপর আবার বসিয়ে দিলাম৷ এটা সাংঘর্ষিক ও বৈষম্যমূলক৷ নৈতিকভাবেও এটা ঠিক না৷ এটা অর্থনৈতিক চাপ বাড়াবে৷ ফলে মূল যে উদ্দেশ্য ছিল সেটিও নষ্ট হয়ে গেল৷’’

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতির কারণে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এমনিতেই চাপের মধ্যে রয়েছে৷ আয়কর দেয়া নিয়ে তাদের মধ্যে এখনো ভীতিও রয়েছে৷ সেখানে আয়কর রিটার্ন দাখিলে দুই হাজার টাকা দিতে বাধ্য করা হলে সেটা অনেককে কর দেয়া থেকে অনুৎসাহিত করে তুলতে পারে৷

ন্যূনতম আয়করে পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে বাজেট উত্তর সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিব বলেন, ‘‘কাদের টিআইএন থাকতে হয়, টিআইএন বাধ্যতামূলক কাদের, সেই লিস্টটা যদি সামনে নেন, তাহলে সেখানে দেখবেন টিআইএন বাধ্যতামূলক আমদানিকারক, রপ্তানিকারক, ট্রেড লাইসেন্সধারীর জন্য, কমিশন এজেন্সির জন্য৷ টিআইএন বাধ্যতামূলক পিস্তলের লাইসেন্সের জন্য৷ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাড়ি, গাড়ির জন্য৷ সাধারণ গরিব মানুষের কোনও অসুবিধা হবে না, সাধারণ গরিব মানুষের তো টিআইএন বাধ্যতামূলক নয়৷’’

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন নম্বর থাকলেই বছর শেষে আয়ের হিসাব দিতে হয়৷ কিন্তু বাস্তবে মাত্র এক তৃতীয়াংশ মানুষ এরকম রিটার্ন দাখিল করেন৷ গত অর্থ বছরের বাজেটে ৩৮ ধরনের সেবা পেতে আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র বাধ্যতামূলক করা হলেও তাতে রিটার্ন দাখিলের পরিমাণ খুব বেশি বাড়েনি৷

নতুন অর্থবছরে এরকম সেবার তালিকা বাড়িয়ে ৪৪টি করা হয়েছে৷ সরকারি কর্মকর্তারা আশা করছেন, এর ফলে যারা এসব সেবা নিয়ে আসছেন, কিন্তু কর দেন না, তাদের কাছ থেকে রাজস্ব পাওয়া যাবে৷

অর্থনীতিবিদ এবং অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত মনে করেন, ‘‘আয়কর দেয়ার যে কথা বলা হচ্ছে, সেটা কাকে দিতে হবে? যে টিআইএন হোল্ডাররা ৪৪ ধরনের সেবা নিতে চাইবেন, সেজন্য যারা রিটার্ন দেবেন, তাদের এই দুই হাজার টাকা দিতে হবে৷ কারণ যারা এসব সেবা নিতে চাইবেন, তারা আসলে কোন না কোনভাবে অর্থনৈতিক নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত৷’’

ব্যাখ্যা হিসাবে তিনি বলছেন, যার আয় নেই, তিনি তো আর পাঁচ লাখ টাকার বেশি ঋণ নেবেন না বা ক্রেডিট কার্ড নেবেন না, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ানো বা গাড়ি কিনবেন না৷ এতদিন তারা হয়তো কোন আয় নেই দেখিয়ে রিটার্ন জমা করতেন৷ কিন্তু সরকার যে ৩৮ বা ৪৪ ধরনের সেবা নিতে রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা দিয়েছে, সেই সুবিধা তারা নিতেন৷

বাজেটে ন্যূনতম কর আদায়ের প্রস্তাবনার বিষয়ে শনিবার ঢাকায় একটি সংবাদ সম্মেলনে ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্টেট অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) একটি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল, তারা ওই প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন৷

প্রতিষ্ঠানটির ট্যাক্সেসন কমিটির চেয়ারম্যান মোঃ হুমায়ুন কবির এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘সরকার ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর দেয়ার যে প্রস্তাব দিয়েছে, এই কর কিন্তু ইতিমধ্যেই সবাইকে দিতে হচ্ছে৷ পাঁচ লাখ টাকার ওপরে সঞ্চয়পত্র বা ডিপোজিটের মুনাফা থেকে উৎস কর কেটে রাখা হচ্ছে৷ তাতে যে পরিমাণ কর উৎসে কেটে রাখা হচ্ছে, সারা বছরের হিসাব করলে সেটা কিন্তু দুই হাজার টাকার কাছাকাছি বা বেশি হতে পারে৷’’

তিনি বলছেন, কিন্তু অনেকেই এভাবে কর দিলেও রিটার্ন জমা দেন না৷ আবার অনেকের এরকম আয় থাকলেও সেটা রিটার্নে দেখান না৷

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলছেন, ঢাকায় অনেক গৃহবধু রয়েছে, যাদের নামে এক বা একাধিক ফ্ল্যাট বা প্লট রয়েছে, কিন্তু দৃশ্যত তাদের কোন আয় নেই৷ নতুন নিয়মের ফলে তারাও কর দিতে বাধ্য হবেন৷

তবে এই উৎসে কেটে রাখা কর বছর শেষে আয়কর রিটার্নের সাথে সমন্বয়ের সুযোগ রয়েছে৷ সেটা হিসাব করলে অনেককে আর কোন টাকা দিতে হবে না, বরং রিফান্ডও পেতে পারেন৷

এ নিয়ে ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় অনেকেই পক্ষে বিপক্ষে নানা ধরনের মন্তব্য করছেন৷

২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে, সেখানে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ কোটি টাকা৷ ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা৷ সেখানে রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা৷

সিপিডির হিসাবে, এই লক্ষ্যমাত্রা বর্তমানে রাজস্ব আদায়ের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি৷

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিপুল রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি আদায়ের জন্যই রাজস্ব আয়ের নতুন পথ তৈরি করছে সরকার৷ এজন্যই ন্যূনতম কর আদায়ের প্রস্তাবনা করা হয়েছে৷

সরকারের এই কৌশল থেকে যে রাজস্ব খুব বেশি বাড়বে বলে ড. জায়েদ বখত মনে করছেন না৷ তিনি মনে করেন, সরাসরি কর বাড়াতে হলে সরকারের বিকল্প পদক্ষেপ নিতে হবে৷ যেমন চিকিৎসকরা রোগী দেখে যে আয় করেন, আইনজীবীদের আয় - এগুলো পুরোপুরি করের আওতায় আসে না৷ বাড়ি ভাড়া দিয়ে যারা আয় করেন, সেসব আয় পুরোপুরি করের আওতায় দেখানো হয় না৷ ভ্যাট, ব্যবসার আয়ও পুরোপুরি আয়কর রিটার্নে তুলে ধরা হয়না৷ এসব ক্ষেত্রে সরকারের নজরদারি বা ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ে বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন৷

আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, অর্থনীতির এ সময়কার যে দাবি, সেটা এই বাজেট পূরণ করতে পেরেছে কি না৷ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে আমরা জিডিপির তুলনায় অনেক কম খরচ করি৷ এখন যেটা খরচ করি শিক্ষা খাতে কমপক্ষে তার দ্বিগুণ আর স্বাস্থ্য খাতে তিন গুণ খরচ করা উচিত৷ আমাদের অর্থনীতির এখনকার দুটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে৷ প্রথমটা মূল্যস্ফীতি৷ দ্বিতীয়ত, আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা৷ এ ক্ষেত্রে বাজেট বড়ভাবেই ব্যর্থ হয়েছে৷

আইএমএফের শর্ত যেমন তিন মাস পরপর জিডিপির হালনাগাদ হিসাব প্রকাশ, সুদের হার কিংবা বিনিময় হার সমন্বয়—এ বিষয়গুলোর আলোচনা বাজেটের বাইরে শোনা গেলেও বাজেটে তেমনভাবে এগুলোর আলোচনা নেই৷ আইএমএফের শর্তগুলো যেভাবে এসেছে, সেটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক৷ আমাদের অর্থনীতির এমন একটা পর্যায়ে এসে আমরা কেন বাধ্য হচ্ছি আইএমএফের শর্ত শুনতে?

সরকারি ৪৪টি সেবা পাওয়ার জন্য কেউ যদি ব্যক্তি আয়করসীমার বাইরেও থাকেন, তাকেও ২ হাজার টাকা দিতে হবে৷ এটাকে নৈতিকভাবে ঠিক বলে মনে করি না৷ আমরা কি তাহলে ধরে নিচ্ছি, একজন নিম্ন আয়ের মানুষ তার আয় গোপন করে সরকারি সেবা নিতে যাচ্ছেন? আমাদের নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে আয় গোপন করার প্রবণতা কতটুকু? আমরা তো দেখি যারা উচ্চ আয়ের মানুষ, যাঁরা অতিধনী, তাঁদের মধ্যেই অনেকে করখেলাপি, ঋণখেলাপি, টাকা পাচারকারী আর তারা নানা ধরনের সরকারি সুবিধাপ্রাপ্ত৷ তাদের বিদেশভ্রমণ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, তাদের সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে-এ রকম কিছু তো আমরা কখনো শুনি না৷ পাশাপাশি উঁচু ধনীদের মধ্যে যারা করখেলাপি, ঋণখেলাপি, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা শক্তভাবে যদি বলা হতো, তাহলে হয়তো বিষয়টি ন্যায্যতা পেত৷ সরকারি সুবিধা নাগরিকের ন্যায়সংগত অধিকার৷ সেখানে এ রকম শর্ত আরোপ করা মোটেই যৌক্তিক হতে পারে না৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য